তিল নিয়ে আমরা বেশিরভাগ সময় শুধু হাড় মজবুত করা বা চুল-ত্বকের উপকারিতার কথা শুনি। কিন্তু কিছু দারুণ গুণ আছে, যেগুলো আমরা প্রায়ই খেয়ালই করি না।

প্রথমত, তিলে আছে লিগন্যান নামের এক ধরনের প্রাকৃতিক যৌগ, যা শরীরের হরমোন ব্যালান্স রাখতে সাহায্য করে। মেয়েদের জন্য এটা পিরিয়ডের অনিয়ম বা মেনোপজের সময় উপকারী, আর ছেলেদের ক্ষেত্রে টেস্টোস্টেরন নিয়ন্ত্রণে রাখে।

দ্বিতীয়ত, তিল লিভারের জন্য চমৎকার। এতে থাকা সেসামিন লিভারকে সক্রিয় করে এবং জমে থাকা অতিরিক্ত চর্বি ভাঙতে সাহায্য করে। ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি কমাতে নিয়মিত অল্প তিল খাওয়াটা ভালো অভ্যাস হতে পারে।

আরেকটা মজার বিষয় হলো, প্রাচীনকালে তিল তেল দিয়ে মুখে কুলকুচি করার অভ্যাস ছিল। এতে দাঁত শক্ত হতো, মাড়ির সমস্যা কমত আর মুখের দুর্গন্ধও চলে যেত।

তিলে থাকা ম্যাগনেসিয়াম রক্তচাপ কমাতে এবং স্নায়ুর চাপ হালকা করতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত খেলে মনও তুলনামূলক শান্ত থাকে।

সূর্যের ক্ষতি থেকেও তিল ত্বককে রক্ষা করতে পারে। সেসামিন ও সেসামোল ত্বকের গভীর স্তরকে UV রশ্মির ক্ষতি থেকে বাঁচায়।

সবশেষে, তিলের ফাইবার অন্ত্রে ভালো ব্যাকটেরিয়ার খাবার হিসেবে কাজ করে। এতে হজম ভালো হয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে আর মুডও ভালো থাকে।

তিল খাওয়ার সঠিক পদ্ধতি ও টিপস

1. খালি পেটে ভিজিয়ে খাওয়া

রাতে ১–২ চামচ তিল পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। সকালে পানি ও তিল একসাথে চিবিয়ে খান। এতে ক্যালসিয়াম শোষণ ভালো হয় এবং হজমেও সাহায্য করে।

2. তিল তেল দিয়ে তেল-কুলকুচি (Oil Pulling)

সকালে দাঁত ব্রাশের আগে ১ টেবিল চামচ তিল তেল মুখে নিয়ে ৫–১০ মিনিট কুলকুচি করুন। দাঁত ও মাড়ি শক্ত হয়, মুখের দুর্গন্ধ কমে।

3. সালাদ বা ভাতের সাথে টপিং

হালকা ভেজে গুঁড়া করে রাখলে সালাদ, ভাত বা সবজির ওপর ছিটিয়ে খেতে পারেন। এতে স্বাদও বাড়ে, পুষ্টিও পাওয়া যায়।

4. গর্ভবতী ও নতুন মায়েদের জন্য

তিলের ক্যালসিয়াম ও আয়রন হাড়-মাংসপেশি ও রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে সাহায্য করে।

তবে সিজার বা নতুন সার্জারির পর অতিরিক্ত না খাওয়াই ভালো, কারণ এটা হালকা রক্ত পাতলা করতে পারে।

5. প্রতিদিনের নিরাপদ পরিমাণ

সাধারণত দিনে ১–২ টেবিল চামচ যথেষ্ট। ডায়াবেটিস বা লিভারের রোগ থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাবেন।